Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছ

পরিবেশ সুরক্ষায়
তালগাছ
মৃত্যুঞ্জয় রায়
তালগাছ পরিবেশ সংকটে প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। জলবায়ু পরিবর্তনে একদিকে যেমন খরায় পুড়ছে মাটি, সংকটে পড়েছে মাটির নিচে থাকা পানিস্তর, বাড়ছে শৈত্যপ্রবাহ, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো বজ্রপাতের দুর্যোগ। সব দুর্যোগ মোকাবেলা করে ঠায় এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে একমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার সেই তালগাছ। পাখিরা তা জানে, অথচ মানুষ জানে না। বাবুই বাসা বাঁধে তালগাছে, বাদুড় ঝোলে তালগাছে, শকুন ও ঈগল আশ্রয় নেয় তালগাছে। সারাদিন মাঠে চড়ে বেড়ানো ময়ূরও রাতে ঘুমায় তালগাছের মাথায়। টিয়াপাখি ডিম পাড়ে তালগাছের উপরে। এজন্য কোনো কোনো দেশে তালগাছকে মনে করা হয় শক্তির প্রতীক হিসেবে। ধারণা করা হয় তালগাছ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ যার কাছ থেকে আমরা পাই কাঁচা ও পাকা ফল, কাঠ, পাতা, রস, মোম ইত্যাদি।  
শতবর্ষী তাল
‘এক পুরুষে রোপে তাল/ অন্য পুরুষি করে পাল। তারপর যে সে খাবে/ তিন পুরুষে ফল পাবে।’ খনার এ বচনটি মোটেই মিথ্যে নয়। একটা তালগাছ বাঁচে একশো বছরেরও বেশি আর লম্বা হয় প্রায় একশো ফুট। লাগানোর পর সে গাছে তাল ধরতে সময় লাগে প্রায় বিশ বছর। অনেকে এজন্য তালগাছ লাগিয়ে তার ফল খেয়ে যেতে পারে না। একটা তালগাছে পঁচিশ থেকে চল্লিশটা পাতা থাকে। এতো বড় পাতা খুব কম গাছের থাকে। একটা গাছে বছরে ছয় থেকে বারোটা কাঁদিতে তিনশোটা পর্যন্ত তাল ধরে। পুরুষ গাছে ফল ধরে না, পুরুষ ফুলের জটা হয়। জটা কেটে রস নামানো হয়। মেয়ে গাছে ফল ধরে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে তালগাছে ফুল ফোটে ও রস হয়। দেড় থেকে দু মাস ধরে পুরুষ পুষ্পমঞ্জরিতে ফুল ফুটতে থাকে। মার্চ-এপ্রিলে তালের রস নামে। এপ্রিল-মে মাসে কচি তালের শাঁস হয় ও আগস্ট-সেপ্টেম্বরে তাল পাকে। অক্টোবর-নভেম্বরে তালের আটি থেকে গ্যাঁজ হয় ও ভেতরে ফোঁপা হয়।
তালগাছকে বলা হয় কল্পবৃক্ষ অর্থাৎ এ গাছের কাছে বেঁচে থাকার জন্য যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায়। এ গাছ থেকে পাওয়া যায় রস, গুড়, চিনি, তালমিশ্রি, তালশাঁস, তাল ফল, তাল ফোঁপা, নারিকেলের মতো বীজের শাঁস থেকে তেল ইতাদি খাদ্য। এমনকি তালের আটি থেকে সদ্য গজানো অংকুর বা গ্যাঁজ সিদ্ধ করে খাওয়া যায় যা পুষ্টিকর। পাকা ফলের আঁশ পাওয়া যায় রেয়নের মতো সুতা যা দিয়ে তৈরি করা যায় বস্ত্র, বাসস্থান নির্মাণের জন্য তালকাঠের চেয়ে শক্ত কাঠ আর কি আছে! তালগাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। যে যুগে কাগজ আবিষ্কার হয়নি, সে যুগে তালপাতা ব্যবহৃত হতো লেখার জন্য। এখনো অনেক জাদুঘরে তালপাতার পুঁথি দেখা যায়। অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা- মানুষের এই পাঁচটি মৌলিক চাহিদার সবই পূরণ করতে পারে তালগাছ। তালগাছের বিভিন্ন অংশ থেকে তৈরি কারুপণ্য যেমন হাতপাখা, টুপি, ব্যাগ, বর্ষাতি, মাথাল, ঝুড়ি উপার্জনের উৎস। তালের রস আফ্রিকায় মদ ও বিয়ার তৈরির অন্যতম উপকরণ। একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় দেড়শো লিটার রস পাওয়া যায়।
বজ্রযোগী তাল
তালগাছ যেন এক বজ্রযোগী, মানুষ ও প্রাণীকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করে চলেছে সেই অনাদিকাল থেকে। যেসব এলাকায় লম্বা লম্বা তালগাছ বেশি, সেখানে বজ্রপাতে মৃত্যু হার কম। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্যান্য দুর্যোগের সাথে বজ্রপাতও এক দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফাঁকা মাঠে কাজ করতে থাকা অনেক কৃষক বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, বিগত এক দশকে (২০১০-২০১৯) বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছে ২৫৭১ জন, এর প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামের মানুষ ও ৮৪ শতাংশ পুরুষ। চলন বিল ও হাওরে তাই অনেকেই আর কৃষি কাজ করতে যেতে চাইছেন না। ২০১৬ সালে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকার সে বছর ১৭ মে বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগের তালিকায় বজ্রপাতকে অন্তর্ভুক্ত করে। সরকার বজ্র নিরোধক হিসেবে তালগাছ লাগানোর ওপর জোর দিয়েছে। বিশেষ করে বিল বা খোলা স্থানের মধ্য দিয়ে যেসব রাস্তা গিয়েছে তার দুইপাশে এবং জমির আইলে তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেয়া দরকার।
খনার বচনে ‘কুয়ো হয় আমের ভয়/তাল তেঁতুলের কিবা ভয়!’ অর্থাৎ কুয়াশায় আমের মুকুল নষ্ট হয় কিন্তু তাল ও তেঁতুলের কিছুই হয় না। এটাও তালের প্রতি প্রকৃতির আশীর্Ÿাদ। সে কারণেই হয়তো আজও তাল টিকে আছে বরেন্দ্রভূমির মতো খরাপীড়িত মাটিতেও ও শৈত্যপ্রবাহের দেশে।
এ দেশেও স্বাধীনতার আগে যে পরিমাণ তালগাছ ছিল এখন তা নেই। এখন তালগাছ লাগানোর যেমন লোক নেই, তেমনি তালগাছে উঠে রস নামানো ও তাল পাড়ার লোকও খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। দেশে তালগাছ কমে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা শাস্তিও কম পাচ্ছি না। দেশে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু বেড়ে গেছে। এজন্য সরকারিভাবে দেশে তালগাছ রোপণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, আমাদেরকে সে উদ্যোগকে বেগবান করতে হবে।

লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক (অব.), ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭১৮২০৯১০৭, ই-মেইল : kbdmrity@gmail.com

পুষ্টিগুণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছ

পুষ্টিগুণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছ
কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাইফুল আলম সরকার
তাল বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফলজ বৃক্ষ। এটি পাম গোত্রের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ইড়ৎধংংঁং ভষধনবষষরভবৎ। ভাদ্র মাসে পাকা তালের রস দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক পিঠা তৈরি আবহমান বাংলার চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। তালগাছ থেকে উৎপন্ন  কচি ও পাকা ফল, তালের রস ও গুড়, পাতা, কা- সবই আমাদের জন্য উপকারী । কচি তালবীজ সাধারণত তালশাঁস নামে পরিচিত যা বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদান ও ভিটামিনে পরিপূর্ণ। মিষ্টি স্বাদের কচি তালের শাঁস শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় বরং পুষ্টিতে ও ভরপুর। শরীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নেয়া এই তাল শাঁসের পুষ্টিগুণের পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য।
সারণি : প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে পুষ্টি উপাদান  
এ সব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। যেমন :
ষ তালের শাঁসে প্রায় ৯৩% বিভন্ন প্রকার ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানি ও প্রাকৃতিক জিলেটিন থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমে পরিশ্রান্ত কর্মজীবী মানুষেরা তালের শাঁস খেলে দেহকোষে অতিদ্রুত ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সের মাধ্যমে শরীরে পুনরুদন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দূর করে প্রাকৃতিকভাবে ক্লান্তিহীন রাখে । এ কারণে তালের শাঁসকে অনেক পুষ্টিবিদ প্রাকৃতিক শীতলীকারকও বলে থাকেন।
ষ অতিরিক্ত রোদে ও গরমের কারণে ত্বকে বিভিন্ন র‌্যাশ বা এলার্জিতে দেখা দিলে তালের শাঁস মুখে লাগাতে পারেন। তাছাড়া সানবার্ন থেকে মুক্তি পেতে তালের শাঁসের খোসা ব্যবহার করা যায়।
ষ কচি তালের শাঁসে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আপনার পানি পানের তৃপ্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, বমিভাব দূর করে, খাওয়ার রুচি বাড়ায়। তাছাড়া লিভারজনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও তালের শাঁস বেশ কার্যকর।
ষ তালের শাঁসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম (৩৫%) হওয়ায় ডায়বেটিস রোগীর জন্য এটি একটি চমকপ্রদ খাদ্য উপাদান। অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি খাবেন এ নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারাও অনায়েসে খাদ্য তালিকায় তালের শাঁস রাখতে পারেন কেনানা এটি তুলনামূলক কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। তালের শাঁস অধিক আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় যারা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য পেটের পীড়ায় ভুগছেন তালেরশাঁস হতে পারে তাদের জন্য প্রকৃতি প্রদত্ত এক ঔষধ।  
ষ এতে থাকা ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য খনিজ উপাদান হাড় ক্ষয়, উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত স্বল্পতা ও ক্যান্সারসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে।  
খেজুর গুড়ের ন্যায় তালের রস জ্বাল দিয়ে তৈরিকৃত তালমিছরিও আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি খাদ্য উপকরণ, যা সাধারণত বিভন্ন অসুখবিসুখে পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তালমিছরি গুণাগুণ বর্ণনা করতে গেলে প্রথমত এর পুষ্টিগুণ বিবেচনা করতে হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬ বি১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক ও ফসফরাস। সর্দি-কাশি, রক্তস্বল্পতা ও পেটের পীড়াসহ নানাবিদ রোগের চিকিৎসায় এটি বেশ কার্যকর। যাদের ঘন ঘন ঠা-া লাগার ভয় রয়েছে বিশেষত কাশি, গলায় জমে থাকা কফ, শ্লেষ্মা দূর করতে হালকা গরম পানিতে গোলমরিচ গুঁড়া ও তালমিছরি গুলে খাওয়ালে বেশ উপকার হয়। তাছাড়া তুলসী পাতার রসের সাথে তালমিছরি গুলে খেলে পুরানো সর্দি-কাশি অতি দ্রুত নিরাময় হয়। চিনির তুলনায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশ কম হওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীর পাশাপাশি সব বয়সের মানুষের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে এটি বেশ নিরাপদ। মিছরি ক্যালসিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় ক্ষয় ও রক্তস্বল্পতায় ভুগা রোগীরা খাদ্য তালিকায় মিছরি রাখতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা ও অনায়াসে মিছরি খেতে পারেন কেননা মিছরিতে রয়েছে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী সোডিয়াম প্রায় নেই বললেই চলে।
এ ছাড়াও  প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন কাজেই তালগাছ আমাদের  নিত্য অনুষঙ্গ। তালগাছের কাঠ মূলত ঘরের খুঁটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে তালগাছের নৌকা বিশেষত হাওর অঞ্চলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। পূর্বেকার দিনের বিভিন্ন ধর্মীয় ও অন্যান্য পুস্তক মূলত তালপাতাতেই লেখা হতো। গ্রামেগঞ্জে এখনও তালপাতার হাতপাখার রয়েছে বিশেষ কদর।  তাছাড়া, তালপাতা জ্বালানির পাশাপাশি, মাদুর, ঘর ছাউনি ও বেড়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
তবে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে সৃষ্ট  দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বত্র অধিকহারে তাল গাছ রোপণ এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে । বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বজ্রপাতের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ২০০০-২৪০০  জন মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যায় এবং ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়। বাংলাদেশে ২০১৬ সালে মে মাসে মাত্র একদিনের ব্যবধানে ৮২ জনসহ সর্বমোট   ৪৫০  মানুষের মৃত্যু বজ্রপাতের ভয়াবহতার চিত্র করুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালে বজ্রপাতের কারণে প্রায় ৩০৭ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে যা ২০১৫ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। সরকারি তথ্যমতে, বজ্রপাতের কারণে প্রতিনিয়তিই মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে, যেমন, ২০১৮ সালে ব্রজপাতের কারণে মৃত্যুর এ সংখ্যা ছিল ৩৫৯। ব্রজপাতের কারণে এই হতাহতের ঘটনা সবচেয় বেশি হচ্ছে হাওরাঞ্চলে। মাত্রাতিরিক্ত বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে এবং এর প্রতিকারে করণীয় নির্ধারণে তৎপর হয়। বজ্রপাতের কারণে অতি উচ্চ ভোল্টেজসম্পন্ন বিদ্যুৎ সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠের সবচেয়ে উচু স্থাপনা বা বস্তুতে আঘাত হানে। এজন্য পরিবেশ বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদগণ পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ করে বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য অধিকহারে তালগাছ রোপণের উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তালগাছ সাধারণত ৩০ মিটার (৯৮ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়, এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি বজ্রপাতে সৃষ্ট অতি উচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন বিদুৎ পরিবহন করে মাটিতে পৌঁছে দিয়ে বজ্রাহতের হাত থেকে রক্ষা করে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে সারা দেশব্যাপী কয়েক মিলিয়ন তালগাছ রোপণও করেছে।
তাছাড়া, ভাঙ্গন ও মাটি ক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও তালগাছের জুড়ি মেলা ভার। তালগাছ গুচ্ছমূলীয় হওয়ার কারণে নদীর ভাঙ্গন ও মাটির ক্ষয়রোধে এর রয়েছে বিরাট ভূমিকা। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে প্রবল স্রোতে নেমে আসা উজানের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ভাঙ্গনের কবলে জর্জরিত  রাস্তা ও বেড়ি বাধ বন্যা পরবর্তী যোগাযোগক্ষেত্রে অবর্ণনীয় দুর্যোগের সৃষ্টি করে । প্রতি বছরই এই সব অঞ্চলে রাস্তা ও বাধ পুন:নির্মাণে জন্য মোটা অংকের রাজস্ব ব্যয় হয়। এ সমস্ত বন্যাপ্রবণ এলাকার রাস্তা ও বাধের দুই পাশে তালগাছ রোপণ করে ভাঙ্গনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। এই বছর সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরপর দুইবার ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন বন্যায় রাস্তাঘাটের ভাঙ্গন অধিকহারে তালগাছ রোপণের গুরুত্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে তালগাছের জন্য তেমন বিশেষ কোন পরিচর্যারও প্রয়োজন হয় না।
এ জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বজ্রপাত, বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের পাশাপাশি সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে আমাদের সকলকে পরিবেশবান্ধব এই বৃক্ষ রোপণে সচেষ্ট হতে হবে।

লেখক : বিজ্ঞানী (ফলিত গবেষণা), পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্প, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। ইমেইল :saiful.barj@gmail.com মোবাইল: +৮৮০১৬৯০-০৫৭৫৭৭

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon